• ডাঃ লালা সৌরভ দাস,কনসালটেন্ট এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, এখন থেকে সিলেটের সোবহানীঘাটে ওয়েসিস হাসপাতালে ছুটির দিন বাদে বিকেল ৫টা - ৮টা রোগী দেখবেন।

  • শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন

    মানবদেহের সংক্রামক রোগসমূহ আমাদের দেহে প্রবেশ করে অপরিষ্কার পরিবেশে জীবনযাপনের জন্য। এমনকি সংক্রামক নয় এমন রোগসমূহও প্রবল আকার ধারন করে এমন পরিবেশে। তাই নিজের, পরিবারের এবং সমাজের সবার নিরাপত্তার স্বার্থে পরিষ্কার পরিছন্নতায় গুরুত্ব দিন।

  • শাঁকসবজি সহ পুষ্টিকর সুষম খাদ্যতালিকা মেনে খাবার গ্রহন করুন

    ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তের চর্বি বৃদ্ধি, দেহের ওজন বৃদ্ধি, ক্যান্সার সহ নানা সমস্যার সমাধান দিতে পারে সুষম খাদ্যতালিকা মেনে পরিমিত পরিমানে খাবার গ্রহনের অভ্যাসটি। এরই সাথে নিয়মিত ব্যায়াম, শারীরিক পরিশ্রম এবং পর্যাপ্ত ঘুম অত্যাবশ্যক।

  • বাসায় নিয়মিত ডায়াবেটিস পরিমাপের গুরুত্ব

    ডায়াবেটিস রোগীর নিজের রক্তের সুগার নিজে পরিমাপের গুরুত্ব অপরিসীম। একজন ডায়াবেটিস রোগী নিজের রক্তের সুগার মেনে নিজেই বুঝতে পারেন তা নিয়ন্ত্রনের মাঝে আছে কিনা এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তের সুগার অতিরিক্ত কমে যাওয়া) নির্ণয় করে তা প্রতিরোধ করতে পারেন।

  • 1st BES-MAYO Advance Course in Endocrinology in Bangladesh

    The mid of 2018 brings an exciting news for Bangladeshi Endocrinologists. Mayo Clinic, a nonprofit academic medical center based in Rochester, Minnesota, focused on integrated clinical practice, education, and research and also world's number one Endocrine center is going to arrange a "Advance Course in Endocrinology" in collaboration with Bangladesh Endocrine Society on 24th-25th January, 2019

বিশ্ব তামাকবিরোধী দিবস ২০১৪

ছোটবেলায় লাল, নীল নানাবর্ণের সিগারেট লাইটার জমাতে খুব ভালো লাগতো। আমার এক দাদু, যিনি অনেকটা চেইন স্মোকার ছিলেন, তাঁর কল্যাণে আমার এই লাইটারের কালেকশন বেশ ভালই ছিল। কিভাবে একটা স্পার্ক থেকে আগুণ জ্বলে উঠে এই অদ্ভুত জিনিসটা আমাকে সবসময়ই আকর্ষণ করতো। কিন্তু বলাই বাহুল্য, যতবার আমার এই কালেকশন মায়ের হাতের কাছে পড়তো ততবারই লাইটারগুলোর জায়গা হতো রাস্তার পাশের ড্রেইনে। মায়ের মনে একটা অদ্ভুত ধারনা ছিল, যে ছেলের হাতে ছোট বয়সে লাইটার পড়লে সে বড় হলে সিগারেট খাওয়া শুরু করে দিবে। বারবার প্রতিবাদ করতাম, করে আবার জমানো শুরু করতাম চুপিচুপি করে। কিন্তু কে শুনত কার কথা। প্রতিবারই লাইটারগুলো হারিয়ে যেত মায়ের হাতের ছোঁওয়ায়। একসময় বিরক্ত হয়েই হার স্বীকার করলাম। এরপর স্কুলজীবনের মাঝামাঝি সময়ে এসে একদল বন্ধুকে দেখলাম, ক্লাসব্রেকের সময়ে কোথায় জানি হারিয়ে যেতে। একসময় খুঁজেপেতে আবিষ্কার করলাম কি হয় এই সময়ে। স্মোকারদের খুব ভালো স্বভাব হচ্ছে এরা অনেক শেয়ারিং মাইন্ডেড, কিন্তু মনের খচখচানিতে কখনো এই শেয়ারের ভাগীদার হওয়ার ইচ্ছে জাগেনি, হয়তো ছোটবেলার লাইটারের শিক্ষে। স্কুল জীবনে শুরু হয় ফ্রেন্ডের শেয়ারিং থেকে, কলেজে জীবনে সেই মেয়েটাকে ইম্প্রেস করতে গিয়ে আর মেডিকেল লাইফে ফ্রাসট্রেসন কাটাতে গিয়ে। মেডিসিন ওয়ার্ডে প্রতি এডমিসনে গড়ে ১টা করে শ্বাসকষ্ট, বুক ব্যাথার পেসেন্ট পেতাম যাদের ফাইনাল ডায়গনসিস হতো ফুসফুসের ক্যান্সার। হিস্ট্রি নিতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখতাম, মেয়েরাও বিড়ি সিগারেট খেতে কম যায় না। নিজের ডিসিশন অন্যের উপর দিয়ে চালিয়ে দেয়ার বদ একটা স্বভাব আছে আমার, এক স্বভাব নিয়ে মাঝে তখনই শুধু ভালো লাগে যখন রিকশাওয়ালাকে চাপ দিয়ে রিকশা চড়া অবস্থায় অন্তত সিগারেট খাওয়াটা বাদ দেয়াতে পারি। দুদিন আগেই, সামনে বাজেটে সিগারেটের উপর ট্যাক্স বাড়ানোর জন্য খোলা একটা ফেসবুকে ইভেন্টে আমাদের জুনিয়র একটা মেয়ের পোস্ট দেয়ার পর তাঁর পোস্টের প্রতিবাদে কমেন্ট দেখে বুঝতে পারলাম, রিকশাওয়ালারাও অনেক কিছু বুঝে যা আমাদের মাঝে অনেকেই বুঝে না।



শেষ করার আগে আরেকটা গল্প। গল্পটা আমাদের পেডিয়াট্রিক্স বিভাগের প্রফেসর ডাঃ মান্নান স্যারের, ওয়ার্ডে তাঁর মুখে শোনা। ওয়ার্ড রাউন্ড দিতে দিতে হটাত এক্সিডেন্টাল লাইম (চুন) পয়সনিং এর বাচ্চাকে দেখে স্যারের মুখে তাঁর মায়ের আর বউের কথা আসলো। স্যারের মা অনেকটা সৌখিন স্বভাবের, মেডিকেলের ব্যস্ততার জীবনের মাঝে স্যার যতবার বাড়িতে যেতেন, ভরপেট খাওয়ার পর স্যারের মা বিরাট একটা পানের বাটা নিয়ে ছেলের পাশে বসতেন, বসে নানান মশলা, চুন, জর্দা মেশানো এক খিলি পান স্যারকে খাওয়ানোর পর দুজনের গল্প হতো। একসময় স্যারের বয়স বাড়লো, স্যার মায়ের পছন্দে বিয়েও করলেন। বিয়ের পরদিন রাতে খাবার পর স্যারের মা যথারীতি স্যারের জন্য পান বানাতে বসলেন, তখন স্যারের বউ এসে স্যারের মায়ের কাছ থেকে পানের বাটা নিয়ে গিয়ে বললেন, "মা, আমার জামাইকে আমি আর পান খাওয়াতে দিবনা।" এটা প্রায় ৩০ বছর আগের কথা, এরপর থেকে স্যারের আর পান খাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি! বাই দি ওয়ে, এতো কথা বলার পর স্যার শুধু বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়েই ডায়গনসিস করলেন যে চুনটা শুধু বাচ্চাটার মুখের কিছু লোকাল ইঞ্জুরি করেছে, পেটের ভিতর যায়নি। স্যারের ভাষায়, ৩০ বছর আগে আমার মুখের ভিতরটা দেখলে তোমরা বুঝতে পারতা যে, পান চুন কতো ভয়ঙ্কর।
আজ বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবস, একটা দিন ভালো লাগার মানুষটার কথা শুনুন, একটা দিন থেকে বদলে যেতে পারে সব কয়টা দিন।
বাদবাকি যারা সিগারেট খান না, চুনপান কিছুই খান না: অনেকসময় আমরা কাছের মানুষের অনেক কিছু দেখেও এড়িয়ে যাই। বাইরের মানুষকে বুঝানোর আগে নিজের কাছের মানুষকেই বুঝানো সবার আগে দরকার। আমি ও মাঝে মাঝে চেষ্টায় থাকি, কতোটুকু কাজে আসে জানিনা, তবুও লেগে থাকি। হয়তো কোন সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়...
Share:

একজন সার্জনের অভিজ্ঞতা (সংগ্রহীত)

ও পুত দরজার সামনে গাড়ী খারাই রইয়ে ।
তখন চট্যগ্রামে থাকি । মধ্যরাত্রি পেরিয়ে গেছে ,বাইরে ঝমঝম বৃষ্টি, শো শো বাতাস ,দুরে কোথাও বাজ পডার শব্দ ,এরি মাঝে ক্লিনিক থেকে কল এসেছে যাবার জন্য । সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে বললে এমন একজনার নাম বলল , না গিয়ে উপায় নেই । তাড়াতাড়ি যাবার জন্য প্রস্তুত হতে হতে এম্বুলেন্স বাসার সামনে উপস্তিত । মাথায় ছাতা ধরে এম্বুলেন্সে উঠে বৃষ্টির পানিভরা রাস্তার বুক চিরে ক্লিনিকে পৌছে গেলাম । এত গভীর রাতেও ক্লিনিকের রিসেপসন অনেক লোকজন দিয়ে ভরা ,আমাকে আশা জাগানিয়া চোখে দেখছে যেন সমুদ্রমাঝে হাল ধরার আমিই নাবিক । ক্লিনিকের বাগানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছিল যেন এইজন্যই তারা এখানে আছে ,বাইরে কোনকিছু দেখা যায়না শুধু অন্ধকার ।
ইমারজেন্সির ঘোলাটে আলোতে অনেক লোকের ভীড়ে রোগী শুয়ে আছেন ,মানুষ সরিয়ে দেখলাম সে আমার দিখে ডুবন্ত চোখে চেয়ে আছেন ।নাম মোহাম্মদ আলী ,পেশায় ট্রাক ড্রাইভার ,একজন মন্ত্রীর খাসলোক । কিছুক্ষন আগে বৃষ্টির মধ্যে ট্রাক চালনোর সময় আর একটি ট্রাকের সাথে মুখুমুখি সংঘর্ষে স্টিয়ারিং হুইলের চাপে আটকে ছিল । দরজা কেটে বের করা হয়েছে । হাত ,পা, বা মাথায় আঘাত লাগেনি । শরীরের বাইরে কোন আঘাতের চিন্নহ নেই । তার নাড়ীর স্পনদন নেই ,রক্তচাপ শুন্যের কোটায় ,শ্বাসপ্রশ্বাস শুনা যায়না -মনে হয় জীবন মরণের সন্ধিক্ষণে আছে । মুহুর্তেই বুঝে গেলাম ইনটারনাল ব্লিডিং হচ্ছে ,শকে আছে । বাইরে বেরিয়ে রক্তের কথা বলাতে সবাই লাইনে দাড়িয়ে আমারটা নেন ,আমারটা নেন বলে বলে শোরগোল উঠে । এদের মধ্যে চার ব্যাগ এ বি পজিটিভ এবং মেচ করে দিয়ে দেবার পরে,আরো লাগবে বলাতে ঐ বৃষ্টির মধ্যেও ট্রাকে করে শ'খানেক ট্রাক ড্রাইভার ,হেলপার হাজির । আরো চার ব্যাগ দেবার পর একটু একটু শিরার স্পন্দন এবং রক্তচাপের উন্নতি হয় -দুএকফোটা পেছাবের মুক্তি হয় । দুরে কোথাও সুমধুর আজানের ধ্বনি শুনা যাচ্ছিল । ঘরওয়ালী ফোন করে বাসায় কবে আসব ? জানতে চাইলে পরিস্থিতি জানিয়ে মোহাম্মদ আলীর নিবিড় পর্যবেক্ষনে আরো গভীরভাবে জড়িয়ে যাই । মেঘের ঘোমটার আড়ালে তখন পুবাকাশে সুর্যের আলোর বিকিরন হচ্ছে ।
সকালে রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে ,ই সি জি এবং পেটের আল্ট্রাসনগ্রাফি করলে লিভার ছিড়ে যাওয়া নিশ্চিত হয় । এতবড় অপারেশন ,তাও আবার মন্ত্রীর লোক ভেবে ঝামেলার কথা ক্লিনিক মালিককে জানালে সেও দুমনায় পড়ে যায় । একটু পরে মন্ত্রীর এ পি এস আমাকে ফোন করে এখানেই অপারেশনের জন্য বললে টেনশন আরো বেড়ে যায় । বাইরে শতশত লোক ।অনেক সময় দেখেছি রক্তের কথা বললে অনেকে সটকে পড়ে ,আজ দেখছি লোক আর ও বাড়ছে "স্যার রক্তের কোন অভাব নেই আমাদের আলী ভাইরে বাচান" । অপারেশনের সময় নিজে ঠিক থাকার জন্যে নাস্তা সেরে নিলাম , কিন্তু গলা দিয়ে পানির ঢোকের সহায়তা নিতে হল । "সাহসের সাথে উপস্থিত বুদ্বির রসায়ন দিয়ে পাড়ি দিতে হবে "ভেবে লম্বা শ্বাস নিতে থাকলাম ।
অপারেশন টেবিলে মহাম্মদ আলীকে খালী গায়ে দেখে মুষ্টিযোদ্বা আলীর কথা মনে পড়ে গেল ,এও দেখি সেরকম সুগঠিত ;খেটে খাওয়া ট্রাক ড্রাইভার বলে কথা । এনেস্থেসিয়া দেবার পর তার রক্তচাপ আরো কমে গেলে অন্য একটি চ্যেনেল করে রক্ত দেয়া শুরু হয় । রক্তচাপ একটু বাড়লে পেট খুললে ছোপ ছোপ রক্ত আমাকে এবং সামনের সহকারিকে ভিজিয়ে দেয় , রক্তের বোতল চেপে ও রক্ত ঢুকানো হয় , আরও রক্ত দেয়া লাগে । সব রক্ত পেট থেকে বের করে দিয়ে লিভারে হাত দিয়ে নিজেই ঝিম ধরে গেলাম ,কারন এটা একেবারে উপরের দিকে যেখানে আমার সেলাই পৌছানো অসম্ভব । হাত দিয়ে চেপে ধরলে বন্ধ হয় ,হাত আলগা করলেই গলগল করে বের হয় ,প্রেশার কমে যায় । তখন মনে হচ্ছিল "কেন সার্জারিকে কেরিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম " । অনেকক্ষন চেপেধরে, কয়েকবোতল রক্ত তাড়াতাড়ি দিয়ে রক্তচাপ বাড়িয়ে ঠায় দাড়িয়ে রইলাম ,কেউ কথা বলছেনা ,শুধূ এ সির শব্দ , আবার চাপ সরালে গলগল রক্ত - নাহ আজ আর কেউ তাকে বাচাতে পারবেনা । তখন অফিস টাইম শুরু হয়ে গেছে ,দুএকজন সার্জারীর কলিগদের আসার জন্য ফোন করলে অপরাগতা জানিয়ে দিল । শেষে আমার অধ্যাপককে ফোন করলাম ,উনি থোরাকোটমির পরামর্শ দিলেন ,কিন্তু এনেস্টেটিস্ট রিস্কি বলে অসম্মতিতে মাথা জাকাল । শেষে অনেকগুলো জেলফোম দলা পাকিয়ে ছেড়া জায়গায় ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে রইলাম প্রায় ৩০ মিনিট , ভয়ে ভয়ে আলগা করলে দেখি রক্ত পাত কমে গেছে , আর ও খানিক্ষন চাপ দেয়ার পর দেখি বন্ধ হয়ে গেছে । পরে ড্রেন দিয়ে চলে আসি। পরের দিন দেখতে গেলে দেখি মুচকি মুচকি হাসছে ;ভাবলাম বোধ হয় এ যাত্রা বেচে গেছে ।
তিনদিন ভাল থাকার পর হঠাত তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে একটি মেডিকেল বোর্ড করা লাগে । বুকের এক্স-রেতে দেখা যায় ,বুকের ডান পাশে পানি জমে ভরে গেছে । বোর্ডের সিদ্বান্ত অনুযায়ি ইন্টারকস্টাল টিউব দিলে দেখি পিত্তরস আসে , শ্বাসকস্ট সামান্য লাঘব হয় ।পিত্তরস আসার কারন হল লিভারের সাথে সাথে ডায়াফ্রাম ছিড়ে গিয়ে চেস্টের সাথে যোগাযোগ হয়ে যাওয়া । চটগ্রামে তখন চেস্ট সার্জন না থাকাতে তাকে ঢাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে পাঠালে তারা ব্রঙ্কুপ্লুরাল ফিশটুলাটি বন্ধ করে দিলে সে ভাল হয়ে যায় । পরে ইন্সিসনাল হার্নিয়া হলে আমরাই ঠিক করে দেই ।
দুই বছর পর আমি তখন কুমিল্লাতে দোতলা বাসা কাম চেম্বারে রূগী দেখি ,ডায়বেটিসের জন্য আমার মা বারান্দায় হাটেন । হঠাত একটি ট্রাকের হুইসেল , দেখি গাড়ীটি আমাদের বাসার উঠানে এসে থেমেছে । আমার মা বলে উঠলেন "ও পুত দরজার সামনে গাড়ী খারাই রইয়ে "।
সিড়িতে দেখলাম মোহাম্মদ আলী উঠে আসতেছে ,হাতে দুটি বিশাল ইলিশ । "স্যার চাদপুর গেছিলামতো ,দুটো বড় পেলাম ,ভাবলাম আপনার জন্য নিয়ে আসি "আলীর গমগম কন্ঠের সহাস্য উচ্চারন ।
সেদিন রাতে আমাদের বাসাটি খটি ইলিশের সুগন্দ্বে ভরে গেছিল ,মা ও মোহাম্মদ আলীকে না খাইয়ে ছাড়েনি ।
------------------------------------------------------------------------------------------------



স্যার বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ইউরোলজী বিভাগে প্রফেসর হিসাবে কর্মরত আছেন।
Share:

এন্টিবায়োটিক ড্রাগ রেসিস্টান্স এবং আমাদের ভবিষ্যৎ...

২০৩০, দৃশ্যপটঃ ঢাকার প্রখ্যাত কোন এক হাসপাতাল। সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধাযুক্ত আইসোলেশন ওয়ার্ডের কাঁচের ঘরে শুয়ে আছে নিতু, বয়স ৫ বছর। অল্প দূরেই ওয়েটিং রুমে বসে আছেন নিতুর মা বাবা, অশ্রুসজল চোখে শুধুই দিন গোনার পালা। এই মাত্র কয়েকটা দিন আগেই দুরন্ত মেয়েটা খেলতে গিয়ে ছোট্ট একটা আঘাত পেয়েছিল ডান পায়ে। কিছু বোঝার আগেই দুদিনের মাথায় ক্ষতটা ইনফেকশন হয়ে জুড়ে নেয় পায়ের অনেকখানি জায়গা, সাথে তীব্র জ্বর। ডাক্তার দেখানো হল, ক্ষত থেকে পুজ নিয়ে ব্যাকটেরিয়া কালচার করা হল। এসেছিল রিপোর্টে, টোটাল ড্রাগ রেসিস্টেন্ট স্টেপ. ওরিয়াস। ডাক্তারদের কিছু করার ক্ষমতা অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবুও শেষচেষ্টা হিসাবে সর্বোচ্চ ক্ষমতার এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হল। তবুও ধীরে ধীরে নিতুর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে একে একে...

আকাশচুম্বী ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে নিতুর মা। আকাশে আজ বৃষ্টি নেই, তবু অঝর ধারায় চোখের জল থেমে নেই এই মায়ের। নিতু আর নেই। এই মায়ের খালি হয়ে যাওয়া বুকের মতো গোটা ঢাকা শহর ও আজ অনেক খানি ফাঁকা। শুধু ঢাকা কেন, পুরো দুনিয়ার অনেকটাই ফাঁকা। কেনই বা ফাঁকা হবে না, সাধারণ কলেরা, ব্যাকটেরিয়াল ফিভারে যেখানে পুরো পরিবার উঝাড় হয়ে যায়, শহরের পর শহর হারিয়ে যায়।
হাঁ, পাঠক। খুব বেশী দিন হয়তো নয়, যেদিন আমাদের এই দৃশ্য দেখতে হবে। মুড়িমুড়কির মতো এন্টিবায়োটিক ব্যাবহারের শাস্তি আমাদেরকে না হলেও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বইতে হবে। খুব বেশী দিন হয়নি, যখন কলেরার কারনে গ্রামের পর গ্রাম ফাঁকা হয়ে যেত, যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই এই অভিশাপ নিয়ে মানুষকে মরতে হতো। এন্টিবায়োটিক এলো, আমরা সুফল ভোগ করতে গিয়ে এমনই এন্টিবায়োটিকের ব্যাবহার শুরু করে দিলাম, যে সাধারণ ভাইরাল ফিভারেও এন্টিবায়োটিক না খেলে মানসম্মান আর থাকে না। সম্প্রতি WHO প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা যায়না এরকম ব্যাকটেরিয়া এখনো পৃথিবীর প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে। দিন দিন এইসব জীবাণু বিবর্তনের মাধ্যমে নতুন নতুন এন্টিবায়োটিকের বিপরীতে ক্ষমতাশালী হয়ে পুরাতন রোগকে আরও কঠিন নতুন রূপে ছড়িয়ে দিচ্ছে শুধুমাত্র আমাদের অসাবধানতার জন্য।


WHO সাধারণ মানুষের মাঝে শুধুমাত্র ৩টি মেসেজ পৌঁছে দিতে চেয়েছেঃ
১) শুধুমাত্র ডাক্তার (পল্লীচিকিৎসক/ফার্মেসির দোকানদার নয়) এবং কেবলমাত্র ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক গ্রহন করার।
২) এন্টিবায়োটিক নির্দেশিত সময় জুড়ে সঠিকভাবে খাবার, শুধুমাত্র রোগের তীব্রতা কমে যাওয়া পর্যন্ত নয়।
৩) একজনের জন্য দেয়া এন্টিবায়োটিক, অন্যজনকে না খাবার নির্দেশনা।





এসব কথা আমাদের দেশের জন্য কি সুফল বয়ে আনবে জানি না, আমাদের দেশে এন্টিবায়োটিক কতোখানি সহজলভ্য তা দেখলে হয়তো ওদের চক্ষু চড়কগাছে উঠত। তবুও আমাদের ও সময় এসেছে ভাববার। শুধু সাধারণ মানুষদের নয়, ডাক্তারদের ও। একটা খারাপ রোগের সংস্পর্শে সর্বপ্রথম ডাক্তারই আসবেন। সংক্রামক রোগগুলোকে যদি এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসাই না করা যায়, তবে অদূর ভবিষ্যতে চিকিৎসা দেয়ার মতো কোন ডাক্তার জীবিত থাকবে কিনা ভেবে দেখবেন একটু...

(গল্পের প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক, গল্পের প্রতিটি দৃশ্যপট কাল্পনিক, স্রষ্টা না করুক ভবিষ্যতে এতো খারাপ কিছু কখনো যেন না হয়, শুধু এই অনুভূতিটা বাস্তবিক ভবিষ্যতের জন্য কিছু করার সময় এখনই)
Share:

এক নজরে...



ডাঃ লালা সৌরভ দাস

এমবিবিএস, ডিইএম (বারডেম), বিসিএস (স্বাস্থ্য)

ডায়াবেটিস, থাইরয়েড এবং হরমোন বিশেষজ্ঞ (এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট)

সহকারী সার্জন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকা

কনসালটেন্ট, ওয়েসিস হাসপাতাল, সিলেট

প্রাক্তন আবাসিক চিকিৎসক (মেডিসিন), পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

মেম্বার অফ বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি

মেম্বার অফ আমেরিকান এ্যাসোসিয়েশন অফ ক্লিনিকাল এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট



Subscribe

Recommend on Google

Recent Posts