আরেকদলে ছিল আদুরে স্বভাবের কিছু ছেলে মেয়ে, ভর্তি হতো কি সমস্যা নিয়ে সবাই ধারনা করতে পারবেন। সরকারী হাসপাতালে এদের সংখ্যা কম হলেও এদের সাথের অতি সচেতন অভিভাবকের সংখ্যা কখনো কম হতো না। হাসপাতালে এসেই এদের প্রথম দাবী হতো হাসপাতালের কেবিনে সিট নেয়া, বিদায় নেয়ার সময় শেষ কথা হতো অভিযোগ দিয়ে যে হাসপাতালের সেবার মান খুবই খারাপ। অভিভাবক রোগীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তোড়জোড় করলেই আদুরে মেয়ে বা ছেলে আরও কয়েকদিন হাসপাতালে থেকে নিজের দামটা বাড়িয়ে নিতে চাইতো।
সরকারী হাসপাতালে সিট স্বল্পতা থাকায় এদেরকে অনেকটা জোর করেই বিদায় জানাতে হতো। বেসরকারীতে এই নিয়মের বাইরে পা ফেলতে হয় অনিচ্ছাসত্ত্বেও। “আমাগো পোলায় টাকা দিব, আপনাগো হাসপাতালে রইলে সমস্যা কিতা?” এই প্রশ্নের জবাবে চুপ হয়ে যেতে হয় অনেক সময়। পোলায় কেন টাকা দিয়ে রাখতে চায় হাসপাতালে, সেটা ডাক্তারও বুঝে রোগী বা তার একান্ত সঙ্গীও বুঝে। তবুও বুঝেও এই না বুঝার ভান করে চলা। একজন বৃদ্ধ অসুস্থ রোগীকে বাসায় রেখে তার সেবায় যে কষ্ট, তার থেকে আধুনিক মানুষগুলো বোধহয় চায় রোগী হাসপাতালেই পড়ে থাকুক। বৃদ্ধের সঙ্গী তার জীবনসঙ্গী বৃদ্ধা, দুজনে মিলে হাসপাতালটাকেই নতুন ঘর করে নেয় তখন। এখানেই খাওয়া দাওয়া, এখানেই গল্পগুজব। নতুন কোন রোগী ভর্তি হলে বৃদ্ধা ছুটে যান তার সাথে পরিচিত হতে। নতুন মুখগুলোর সাথে একটু পরিচিত হওয়া, এটাই তার জীবনের একমাত্র আনন্দ।
ছুটির কাগজ লিখেতে লিখেতে বিলের পাতার দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠি মাঝেমাঝে। দুই/তিন লাখ টাকা বিল! পরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি, রোগী থেকে গেছেন ছয়মাস হাসপাতালে। ছয়মাসের রোগীর বাসার মানুষের শান্তির ঘুমের মূল্য মাত্র তিন লাখ, খুব একটা বেশী না। হাসপাতালগুলোই বুঝি এই যুগের মানুষের জন্য নতুন বৃদ্ধাশ্রম।