আমাদের
এক স্যারের সাইকিয়াট্রিতে পোস্টগ্রেজুয়েসন করার পরে পোস্টিং হল কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজের এনাটমি ডিপার্টমেন্টের লেকচারার হিসাবে। মেডিকেলে
সাইকিয়াট্রি বিভাগ ছিল না তখন। সেই সময় কলেজের প্রথম বর্ষে আমাদের
ক্লাসগুলো শুরু হয়েছে মাত্র। স্যার আমাদের আগ্রহের সাথেই এনাটমির
হাড্ডিগুড্ডি পড়ান, ভিসেরা দেখান। আমরা পিছনে বসে হাসাহাসি করি, কই মানসিক
রোগ বিশেষজ্ঞ নাকি আমাদের এনাটমির ক্লাস নেয়!
এবডমেন কার্ডে এসে ফিমেইল জেনিটাল অর্গান চ্যাপ্টারটা পড়ানোর দায়িত্ব স্যারের ভাগে পড়লো। এবারে সবার আড়ালে আবডালে হাসাহাসির পরিমানটা পর্বতপ্রমাণ হতে লাগলো। ক্লাসের মধ্যে প্রায়ই ছেলেমেয়ে সবার মিলিত কণ্ঠের “হাহা, হি হি” শব্দের হাসি শুনতে পাওয়া যায়। ভাইবা নিতে গিয়ে স্যারেরও মাঝেমাঝে হাসি চলে আসে। কি ওকওয়ার্ড অবস্থা। বছর ঘুরলো, প্রথম প্রফ পার করলাম। ভাবলাম এবার বুঝি সাইকির স্যার গেলেন নেটওয়ার্কের বাইরে।
বিধি বাম। ৩য় বর্ষে আমরা ক্লাস আর ওয়ার্ড শুরু করতে না করতেই কলেজে সাইকিয়াট্রি বিভাগ খুলে দেয়া হল। একমাত্র এসিসটেন্ট প্রফেসর হিসাবে স্যারেরই পদোন্নতি হল সেই বিভাগে। ক্লিনিকাল স্টুডেন্টদের সাইকিয়াট্রি বিভাগে প্লেসমেন্ট বাধ্যতামূলক করা হল। কি যন্ত্রণা, এবার ঠিকই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাগলের চিকিৎসা নিয়ে শিখতে হবে!
ওয়ার্ডে কি সব অদ্ভুত সব রোগী, কথাবার্তা লাগাম ছাড়া। ৭ দিনের প্লেসমেন্ট ফাঁকিবাজি করে ২/৩দিন না গিয়ে কাটিয়ে দিলাম। স্যার আগ্রহ করে কথা বলতে গেলেই আমরা গল্পগুজব করে পাস কাটিয়ে যেতাম। পুরানো ছাত্র বলে স্যারও বেশী কঠিন হতে পারতেন না।
চতুর্থ বর্ষের প্লেসমেন্টে কোন সাইকিয়াট্রি ওয়ার্ড না পড়লেও সপ্তাহ দুয়েক পরপর কোন একদিন সাইকিয়াট্রি লেকচার ক্লাস পড়তো। ঘুমঘুম চোখে লেকচার শুনতে গিয়ে সবারই মনে হতো আমার কোন মানসিক রোগ আছে। কারো মনে হতো বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার, কারো ডিপ্রেশন, কারোবা এন্টিসোশ্যাল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার।
ফাইনাল ইয়ারের সময়টা কেটে গেলো ধুমধাম করে। প্রফের আগে এসেসমেন্টের আগে শুনি মেডিসিনের সাইকিয়াট্রির ভাইবা বোর্ড থাকবে আলাদা। হায় হায়, প্রফের সময় একবারই পড়বো এই সাবজেক্ট ভেবে এটা কবেই রেখে দিয়েছিলাম বাকি বইয়ের তলায়। অল্প সময়ে মেডিসিনের একগাদা পড়ার ফাঁকে কোনমতে ঘণ্টা দুয়েক চোখ বুলালাম এন্ডেভার আর লেকচারের পাতায়, বিশাল সিলেবাস। শেষ হবে না ভেবে হাল ছেড়ে দিলাম প্রায়। ভাইবার হলে পুরনো সেই স্যার দেখি সিজোফ্রেনিয়ার এ বি সি ডি (Auditory Hallucination, Broadcasting of Thought, Controlled Thought, Delusion) পারতেই খুশী। এক স্যার, যাকে আমরা প্রথম বর্ষ থেকে শেষ বর্ষ পর্যন্ত ফেইস করে গেলাম।
ইন্টার্নীতে প্রথম সাইকিয়াট্রির প্রকোপটা অনুভব করলাম। এমিট্রিপটাইলিন, ক্লোনাজিপাম, ফ্লুপেন্টিক্সল+মেলিট্রাসিন ছাড়া কোন প্রেসক্রিপশন যেন সম্পূর্ণ হয় না, সেটা শুধু মেডিসিন স্পেশালিষ্টদের বেলাতেই। সাইকিয়াট্রির প্লেসমেন্টে আরও ট্রিটমেন্টের তো শেষ নাই। একটাই অনুধাবন হল, এদেশের মানুষ যত না শরীরের সমস্যায় ভোগে, তার থেকেও বেশী ভোগে মনের সমস্যায়। অভিজ্ঞতা থেকেই বলা, ডাক্তাররাও এর ব্যতিক্রম নয়।
সাইকিয়াট্রিস্টের কাজটা আমাদের দেশে খুব অমর্যাদাকর হিসাবে রয়ে গেছে অনেকের মনেই। আমেরিকায় বেতনের দিক থেকে ৩য় স্থানে থাকা এই জব হোল্ডারদের সমতুল্য বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে পরিচিত হন পাগলের ডাক্তার হিসাবে। তবুও দিন বদল চলছে, মানুষ এখন বুঝতে শিখছে। আমরাও এনাটমির সাইকিয়াট্রির হাসিঠাট্টার পর্যায় থেকে বুঝতে শিখে এর গুরুত্বটা অনুধাবন করতে পারছি।
১০ অক্টোবর মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। পরিবারে একজন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত সদস্য থাকলেই শুধু আমরা এর গুরুত্বটা অনুধাবন করতে পারি। নিজের ভিতরেও যে কতো সমস্যাগুলোর বীজ বহন করে চলছি তা গোপনই থেকে যায়। শরীরের স্বাস্থ্যের সাথে মনের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হই, এই কামনায়...
এবডমেন কার্ডে এসে ফিমেইল জেনিটাল অর্গান চ্যাপ্টারটা পড়ানোর দায়িত্ব স্যারের ভাগে পড়লো। এবারে সবার আড়ালে আবডালে হাসাহাসির পরিমানটা পর্বতপ্রমাণ হতে লাগলো। ক্লাসের মধ্যে প্রায়ই ছেলেমেয়ে সবার মিলিত কণ্ঠের “হাহা, হি হি” শব্দের হাসি শুনতে পাওয়া যায়। ভাইবা নিতে গিয়ে স্যারেরও মাঝেমাঝে হাসি চলে আসে। কি ওকওয়ার্ড অবস্থা। বছর ঘুরলো, প্রথম প্রফ পার করলাম। ভাবলাম এবার বুঝি সাইকির স্যার গেলেন নেটওয়ার্কের বাইরে।
বিধি বাম। ৩য় বর্ষে আমরা ক্লাস আর ওয়ার্ড শুরু করতে না করতেই কলেজে সাইকিয়াট্রি বিভাগ খুলে দেয়া হল। একমাত্র এসিসটেন্ট প্রফেসর হিসাবে স্যারেরই পদোন্নতি হল সেই বিভাগে। ক্লিনিকাল স্টুডেন্টদের সাইকিয়াট্রি বিভাগে প্লেসমেন্ট বাধ্যতামূলক করা হল। কি যন্ত্রণা, এবার ঠিকই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাগলের চিকিৎসা নিয়ে শিখতে হবে!
ওয়ার্ডে কি সব অদ্ভুত সব রোগী, কথাবার্তা লাগাম ছাড়া। ৭ দিনের প্লেসমেন্ট ফাঁকিবাজি করে ২/৩দিন না গিয়ে কাটিয়ে দিলাম। স্যার আগ্রহ করে কথা বলতে গেলেই আমরা গল্পগুজব করে পাস কাটিয়ে যেতাম। পুরানো ছাত্র বলে স্যারও বেশী কঠিন হতে পারতেন না।
চতুর্থ বর্ষের প্লেসমেন্টে কোন সাইকিয়াট্রি ওয়ার্ড না পড়লেও সপ্তাহ দুয়েক পরপর কোন একদিন সাইকিয়াট্রি লেকচার ক্লাস পড়তো। ঘুমঘুম চোখে লেকচার শুনতে গিয়ে সবারই মনে হতো আমার কোন মানসিক রোগ আছে। কারো মনে হতো বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার, কারো ডিপ্রেশন, কারোবা এন্টিসোশ্যাল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার।
ফাইনাল ইয়ারের সময়টা কেটে গেলো ধুমধাম করে। প্রফের আগে এসেসমেন্টের আগে শুনি মেডিসিনের সাইকিয়াট্রির ভাইবা বোর্ড থাকবে আলাদা। হায় হায়, প্রফের সময় একবারই পড়বো এই সাবজেক্ট ভেবে এটা কবেই রেখে দিয়েছিলাম বাকি বইয়ের তলায়। অল্প সময়ে মেডিসিনের একগাদা পড়ার ফাঁকে কোনমতে ঘণ্টা দুয়েক চোখ বুলালাম এন্ডেভার আর লেকচারের পাতায়, বিশাল সিলেবাস। শেষ হবে না ভেবে হাল ছেড়ে দিলাম প্রায়। ভাইবার হলে পুরনো সেই স্যার দেখি সিজোফ্রেনিয়ার এ বি সি ডি (Auditory Hallucination, Broadcasting of Thought, Controlled Thought, Delusion) পারতেই খুশী। এক স্যার, যাকে আমরা প্রথম বর্ষ থেকে শেষ বর্ষ পর্যন্ত ফেইস করে গেলাম।
ইন্টার্নীতে প্রথম সাইকিয়াট্রির প্রকোপটা অনুভব করলাম। এমিট্রিপটাইলিন, ক্লোনাজিপাম, ফ্লুপেন্টিক্সল+মেলিট্রাসিন ছাড়া কোন প্রেসক্রিপশন যেন সম্পূর্ণ হয় না, সেটা শুধু মেডিসিন স্পেশালিষ্টদের বেলাতেই। সাইকিয়াট্রির প্লেসমেন্টে আরও ট্রিটমেন্টের তো শেষ নাই। একটাই অনুধাবন হল, এদেশের মানুষ যত না শরীরের সমস্যায় ভোগে, তার থেকেও বেশী ভোগে মনের সমস্যায়। অভিজ্ঞতা থেকেই বলা, ডাক্তাররাও এর ব্যতিক্রম নয়।
সাইকিয়াট্রিস্টের কাজটা আমাদের দেশে খুব অমর্যাদাকর হিসাবে রয়ে গেছে অনেকের মনেই। আমেরিকায় বেতনের দিক থেকে ৩য় স্থানে থাকা এই জব হোল্ডারদের সমতুল্য বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে পরিচিত হন পাগলের ডাক্তার হিসাবে। তবুও দিন বদল চলছে, মানুষ এখন বুঝতে শিখছে। আমরাও এনাটমির সাইকিয়াট্রির হাসিঠাট্টার পর্যায় থেকে বুঝতে শিখে এর গুরুত্বটা অনুধাবন করতে পারছি।
১০ অক্টোবর মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। পরিবারে একজন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত সদস্য থাকলেই শুধু আমরা এর গুরুত্বটা অনুধাবন করতে পারি। নিজের ভিতরেও যে কতো সমস্যাগুলোর বীজ বহন করে চলছি তা গোপনই থেকে যায়। শরীরের স্বাস্থ্যের সাথে মনের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হই, এই কামনায়...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন