ধাপ
|
অভুক্ত অবস্থায়
|
গ্লুকোজ খাবার দুই
ঘণ্টা পরে
|
Normal
|
< ৬.১ মিমোল/লি
|
< ৭.৮ মিমোল/লি
|
Impaired Fasting Glucose
|
৬.১ – ৬.৯ মিমোল/লি
|
< ৭.৮ মিমোল/লি
|
Impaired Glucose Tolerance
|
< ৭.০ মিমোল/লি
|
৭.৮ – ১১.০ মিমোল/লি
|
Diabetes
|
=/> ৭.০ মিমোল/লি
|
এবং/অথবা =/>
১১.১ মিমোল/লি
|
ডায়াবেটিক রোগীর জন্য নির্দেশনা
১) ডায়াবেটিস কি?
- আমরা যেসব খাদ্য গ্রহন করি, তা অন্ত্রে পরিপাকের পর শর্করা জাতীয় খাবার থেকে গ্লুকোজ তৈরি হয় এবং তা রক্তের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন কোষে স্থানান্তরিত হয়ে শক্তি তৈরিতে সহায়তা করে। রক্তের গ্লুকোজ রক্ত থেকে কোষে স্থানান্তরিত হতে ইনসুলিন নামক একধরনের হরমোন একান্ত প্রয়োজন হয়, যা শরীরের অগ্নাশয়/পেনক্রিয়াস নামক অঙ্গের “বিটা” কোষ থেকে নিঃসরিত হয়ে থাকে।
ডায়াবেটিস হল ইনসুলিনের ঘাটতি অথবা ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার সামগ্রিক পরিস্থিতি। এতে করে রক্তের সুগার শরীরের কোষে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়। রক্তের সুগার প্রতিনিয়ত বাড়তি থাকতে থাকে এবং শরীরের কোষ সমুহের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।
-
রক্তের সুগার নির্দিষ্ট পরিমান বৃদ্ধি পাবার পর সামগ্রিক পরিস্থিতিকে ডায়াবেটিস হিসাবে চিহ্নিত করা হয় এবং রোগীকে ডায়াবেটিক রোগী হিসাবে চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে।
২) ডায়াবেটিক রোগের লক্ষন কি?
একজন ডায়াবেটিক রোগী বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে ভুগতে পারেনঃ
সুনির্দিষ্ট লক্ষনঃ ১) ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, ২) অতিরিক্ত পানির পিপাসা লাগা, ৩) খুব বেশি ক্ষুধা পাওয়া ৪) যথেষ্ট পরিমানে খাবার পরেও শরীরের ওজন কমে যাওয়া। ৫) ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ করা।
সুনির্দিষ্ট নয় এমন লক্ষন সমূহঃ ১) ক্ষতস্থান শুকাতে বিলম্ব হওয়া। ২) চোখে কম দেখা। ৩) বারবার চামড়ার সমস্যা জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়া। ৪) বার বার প্রসবের সমস্যা বা বাচ্চা নস্ট হয়ে যাওয়া।
মনে রাখবেন, শতকরা ৫০% ডায়াবেটিক রোগীর কোন রকম সমস্যার লক্ষন ছাড়াই ডায়াবেটিস থাকতে পারে, এসব রোগীদের প্রায়শই সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে ডায়াবেটিস ধরা পরে থাকে।
৩) কাদের ডায়াবেটিসের ঝুকি বেশি?
যে কেউ যে কোন বয়সে যে কোন সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে নিম্নলিখিত শ্রেণীর লোকের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার ঝুকি বেশি।
-
যাদের পরিবারে, যেমন মা বাবা বা রক্ত সম্পর্কিত নিকট আত্মীয়ের ডায়াবেটিস আছে।
-
যাদের ওজন অনেক বেশি বা পেটের মেদ অনেক বেশি।
-
যারা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করেন না এবং নিয়মিত ব্যায়াম করেন না।
-
যারা বহুদিন স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ গ্রহন করেন।
-
যারা অধিক পরিমানে শর্করা জাতীয় খাদ্য দীর্ঘদিন ধরে গ্রহন করে আসছেন।
৪) ডায়াবেটিস কি সারানো যায়?
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির এই যুগেও কিছু সংখ্যক বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিসকে বাদ দিলে বাকি সকল রোগীর জন্য ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহন করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখলে একজন ডায়াবেটিস রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সক্ষম।
৫) ডায়াবেটিক রোগের ধাপ সমূহ কি কি?
স্বাভাবিক অবস্থা > অভুক্ত অবস্থায় গ্লুকোজ আধিক্য। (Impaired Fasting Glucose) > শর্করা অসহিষ্ণুতা (Impaired
Glucose Tolerance) > ডায়াবেটিস।
ডায়াবেটিস রোগের আগের ধাপ সমূহে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হলে এবং রোগী পর্যাপ্ত খাদ্যভাস নিয়ন্ত্রন, জীবনযাত্রার পরিবরতন এবং ওজন কমানোর মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগকে প্রতিরোধ অথবা বিলম্বিত করতে প্রায়শই সক্ষম হবেন।
৬) ডায়াবেটিস রোগের কি কি প্রকারভেদ?
সকল ধরনের ডায়াবেটিস রোগকে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
ক) ধরন ১
(Type 1) ডায়াবেটিস
খ) ধরন ২ (Type 2) ডায়াবেটিস
গ) বিবিধ কারনভিত্তিক শ্রেণী
ঘ) গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
ক) ধরন
১ (Type 1) ডায়াবেটিসঃ এই
ধরনের ডায়াবেটিস রোগী সম্পূর্ণ ভাগে ইনসুলিনের উপরে নির্ভরশীল এবং ইনসুলিনের
ঘাটতিতে তাঁদের দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এধরনের রোগ সাধারণত কম বয়সে ধরা পড়ে (<৩০ বছর) এবং সেই সময় অল্পদিনের মাঝে
রোগীর “সুনির্দিষ্ট লক্ষন সমূহ” প্রকাশ পায় এবং শরীরের ওজন দ্রুত কমে যায়, রোগী
প্রায়শই পেটে ব্যথা এবং অজ্ঞান হয়ে যান এবং প্রস্রাবের পরিক্ষায় “কিটোন/এসিটোন”
বলে উপাদান প্রকাশ পায়। এধরনের লক্ষন নিয়ে কেউ প্রকাশ পেলে তাঁকে দ্রুত নিকটস্থ
হাসপাতাল/ডায়াবেটিক রোগীর চিকিৎসায় অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ সহ চিকিৎসা করাবেন। এধরনের
রোগীর জীবনের কখনোই ইনসুলিন বন্ধ করা একদমই অনুচিত, এমনকি অসুস্থতার সময়েও রক্তের
সুগারের সাথে পরিমাপ করে ইনসুলিন প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে, নতুবা “ডায়াবেটিক
কিটোএসিডোসিস” নামক মারাত্মক সমস্যা দিয়ে রোগী আক্রান্ত হতে পারেন।
খ) ধরন ২ (Type 2) ডায়াবেটিসঃ এধরেনের ডায়াবেটিস অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৩০ বছরের পরে হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে
জীবনযাত্রা এবং খাদ্যভাস ইত্যাদির পরিবর্তনের ঝুকির কারনে ৩০ বছরের নিচেই এধরনের
ডায়াবেটিস রোগী ধরা পড়ছে এবং দিন দিন তাঁদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই ধরনের রোগীর
শরীরে আংশিক ইনসুলিন ঘাটতি এবং আংশিক ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। এতে করে
তাঁদের শরীরে রক্তের সুগার বৃদ্ধি পায়। এই ধরনের রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই
স্থুলকায় হয়ে থাকে। এরা সম্পূর্ণ ভাবে ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল নয়। এদের অনেককেই
শুধুমাত্র খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের সাহায্যে চিকিৎসা করা সম্ভব।
আবার সময়ের সাথে সাথে এদের চিকিৎসার জন্যেও ইনসুলিনের প্রয়োজন হতে পারে।
গ) বিবিধ কারনভিত্তিক শ্রেণীঃ
·
জেনেটিক
কারনে ইনসুলিন তৈরি কম হওয়া
·
জেনেটিক
কারনে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া
·
অগ্নাশয়/পেঙ্ক্রিয়াসের
বিভিন্ন রোগ
·
ইনসুলিনের
বিপরিতে অন্যান্য হরমোনের আধিক্য
·
কোন
কোন সংক্রামক ব্যাধি
·
অন্যান্য
কোন প্রতিরোধ ক্ষমতার জটিলতা
ঘ) গর্ভকালীন ডায়াবেটিসঃ অনেক সময় গর্ভবতী অবস্থায় প্রসূতিদের ডায়াবেটিস ধরা পরে।
এদের অনেকের প্রসবের পর ডায়াবেটিস থাকে না। এই ধরনের জটিলতা কে গর্ভকালীন
ডায়াবেটিস বলা হয়।
(***বর্তমানে গর্ভকালীন সময়ের প্রথম তিন মাসের মাঝে ধরা পড়া
ডায়াবেটিসকে পূর্বের ডায়াবেটিস হিসাবে গণ্য করা হয়, এবং দ্বিতীয় এবং তৃতীয়
ট্রাইমেস্টারের ডায়াবেটিসকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (জিডিএম) বলা হয়। এই ধরনের
ডায়াবেটিক মায়ের গর্ভকালীন ঝুকি স্বাভাবিক মায়ের থেকে অনেক বেশি থাকে। ডায়াবেটিস
এই সময়ে ভাল ভাবে নিয়ন্ত্রণে না থাকলে মা এবং বাচ্চা দুইজনেরই শারীরিক ঝুকির
সম্ভাবনা থাকে। এমনকি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ভাল হয়ে গেলেও পরবর্তী গর্ভ বা পরবর্তী
জীবনে পুনরায় ডায়াবেটিস হবার ঝুকি থেকে থাকে।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের একমাত্র চিকিৎসা ইনসুলিন। অন্যান্য
ঔষধের গর্ভকালীন সময়ে এবং পরবর্তী জীবনে বাচ্চার শারীরিক ঝুকি নিয়ে বিশদ
তথ্যউপাত্ত এখনো পর্যন্ত না থাকায় গর্ভকালীন সময়ে ইনসুলিনই হচ্ছে ডায়াবেটিক
চিকিৎসার আদর্শ ঔষধ।
ডায়াবেটিক
মহিলাদের জন্য জ্ঞাতব্য
ডায়াবেটিক মহিলা যদি সন্তান ধারন করতে চান, তবে গর্ভবতী হওয়ার পূর্বে অবশ্যই তাঁকে চিকিৎসকের
পরামর্শ নিতে হবে। ৩-৫ মাস আগে থেকেই খাওয়ার বড়ি বাদ দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন নিয়ে
ডায়াবেটিস উপযুক্ত পরিমানে নিয়ন্ত্রন (রক্তের HbA1c
< ৬.৫%) নিচে এনে চিকিৎসকের অনুমতি সাপেক্ষে পরিকল্পিত ভাবে
গর্ভধারন করতে হবে।
গর্ভকালীন সময়ে রক্তের সুগার খালি পেটে ৫.৩ মিমোল/লি এবং
প্রতিবেলা খাবার দুই ঘণ্টা পরে ৬.৭ মিমোল/লি এর মধ্যে রাখতে হবে। অন্যথায় শিশুর
শারীরিক বিকলাঙ্গতা সহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের ঝুকিসমূহঃ
·
পক্ষাঘাত/
স্ট্রোক
·
হৃদরোগ/
হার্ট এটাক
·
কিডনির
কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া
·
পায়ের
পচনশীল ক্ষত/ গ্রেংগ্রিন
·
চোখের
ভিতরে রক্তক্ষরন/ চোখের দৃষ্টি কমে যাওয়া/অন্ধত্ব
·
পাতলা
পায়খানা, চামড়ার সমস্যা, দাতের মাড়ির ইনফেকশন
·
যক্ষ্মা
·
যৌন
ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া
·
মহিলাদের
মৃত শিশুর জন্ম দেয়া
·
বাচ্চার
শারীরিক বিকলাঙ্গতা, অধিক ওজনের বাচ্চা জন্ম নেয়া
·
উচ্চ
রক্তচাপ এবং রক্তের চর্বির সমস্যা দেয়া দেয়া।
ডায়াবেটিক
রোগের জরুরি অবস্থাঃ
ক)
হাইপোগ্লাইসেমিয়াঃ
রক্তের শর্করার পরিমান কমানোর জন্য ডায়াবেটিক রোগীকে ট্যাবলেট বা ইনসুলিন দেয়া হয়ে
থাকে। প্রয়োজনের থকে অতিরিক্ত ট্যাবলেট খাওয়া বা ইনসুলিন নেয়া অথবা হটাৎ করে
খাওয়াদাওয়া অনেক কমিয়ে ফেলা অথবা অতিরিক্ত শারিরিক পরিশ্রমের কাজ করার ফলে মাঝে
মাঝে রক্তের সুগার বেশি কমে যেতে পারে। এই ঘটনাকে বলা হয় হাইপোগ্লাইসেমিয়া।
রক্তের সুগার কতো
কমে গেলে সেটি হাইপোগ্লাইসেমিয়া?
-
রক্তের
সুগার ৩.৯মিমোল/লিটার এর নিচে কমে গেলে সেটিকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হিসাবে চিহ্নিত
করা হয়ে থাকে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার
লক্ষনসমূহঃ
-
১)
অসুস্থ বোধ করা
-
২)
খুব বেশি খিদে পাওয়া
-
৩)
বুক ধড়ফড় করা
-
৪)
হটাৎ করে শরীর ঘেমে যাওয়া
-
৫)
শরীর কাঁপতে থাকা
-
৬)
শরীর এবং মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা
-
৭)
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষন
প্রকাশ পেলে করনীয়ঃ
এই ক্ষেত্রে সম্ভব হলে
দ্রত গ্লুকমিটার দিয়ে রক্তের সুগার পরিমাপ করে দেখতে হবে সেটি আসলেই হাইপোগ্লাইসেমিয়া
কি না। হাতের কাছে গ্লুকমিটার না পাওয়া গেলে প্রমান ছাড়াই হাইপোগ্লাইসেমিয়ার চিকিৎসা
করতে হবে।
·
রোগীর
জ্ঞান থাকলে এবং রোগী মুখে খেতে পারলে রোগী/পরিবারের সদস্য চা চামচে ৪-৮ চা চামচ চিনি/গ্লুকোজ
এক গ্লাস পানিতে গুলে খেয়ে নিবেন/খাইয়ে দিবেন।
·
রোগী
অজ্ঞান হয়ে গেলে গ্লুকোজ ইনজেকশন হিসাবে রক্তের শিরায় দেবার জন্য দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে
যোগাযোগ করবেন।
খ) রক্তের অতিরিক্ত সুগার বেড়ে গিয়ে জটিলতাঃ ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস এবং ডায়াবেটিক কোমা
লক্ষনঃ
১) রক্তের সুগার খুব বেশি বেড়ে যাওয়া। ২) খুব বেশি পিপাসা পাওয়া। ৩) ঘনঘন প্রস্রাব
হওয়া। ৪) খুব অসুস্থ বোধ হওয়া ৪) বমি বমি ভাব হওয়া, ৫) ঝিমানো/ শরীর নিস্তেজ হয়ে আসা।
৬) দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহন করা। ৭) জ্ঞান হারিয়ে ফেলা
করনীয়ঃ
o
ক) পানি
শূন্যতা কমানোর জন্য অল্প অল্প করে বারবার লবন মিশ্রিত পানি খেতে পারেন।
o
খ) রক্তের
সুগার পরিমাপ করে নিয়মিত ভাবে ইনসুলিন গ্রহন করে যেতে হবে। শুধুমাত্র হাইপোগ্লাইসেমিয়া
বা রক্তের নিচের দিকে থাকলে ইনসুলিনের পরিমান কমাতে হতে পারে। পুরোপুরি ভাবে ইনসুলিন
বন্ধ করা যাবে না।
o
গ) সম্ভব
হলে প্রস্রাবের পরীক্ষা করে সেখানে কিটোন বডি আছে কিনা তা দেখতে হবে।
o
ঘ) অবিলম্বে
ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করতে হবে।
ডায়াবেটিক
রোগীর চিকিৎসাঃ ডায়াবেটিক
রোগীর চিকিৎসার তিনটি স্তম্ভ...
ক) ডায়েটঃ খাদ্যাভ্যাস
নিয়ন্ত্রন।
খ) ডিসিপ্লেইনঃ পরিকল্পিত জীবনযাপন
এবং নিয়মিত ব্যায়াম অনুশীলন।
গ) ড্রাগঃ ডাক্তারের পরামর্শ
গ্রহন করে উপযুক্ত ঔষধ নিয়মিত ভাবে গ্রহন।
মনে রাখবেন,
ডায়াবেটিস সারাজীবনের রোগ। এটি নিয়ন্ত্রনে ডাক্তারের ভূমিকার পাশাপাশি রোগীর
ভূমিকা অপরিহার্য। রোগীর নিজের রোগ সম্পর্কে জানতে হবে এবং তা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজেকে
দায়িত্ব পালন করতে হবে। অন্যথায় ডায়াবেটিক রোগীর রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রন কখনোই
সম্ভব নয়।
শৃঙ্খলাঃ
o
নিয়মিত ও পরিমান মতো সুষম খাবার গ্রহন করতে হবে।
o
নিয়মিত ও পরিমান মতো ব্যায়াম বা দৈহিক পরিশ্রম
করতে হবে।
o
চিকিৎসকের পরামর্শ এবং ব্যবস্থাপত্র সুষ্ঠুভাবে
মেনে চলতে হবে।
o
শরীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
o
পায়ের বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
o
শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের
পরামর্শ নিতে হবে।
o
চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতিত কোন কারনেই ডায়াবেটিস
রোগের চিকিৎসা বন্ধ রাখা যাবে না।
o
বাসায় গ্লুকমিটার রেখে নিজের রক্তের সুগার নিজে
পরিমাপ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারলে সবচেয়ে ভালো।
ডায়াবেটিক
রোগীর খাদ্যগ্রহণের নিয়মাবলিঃ
o
শরীরের
ওজন বাঞ্ছিত ওজনের বেশি থাকলে তা কমিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা, কম থাকলে তা
বাড়িয়ে স্বাভাবিক করা এবং ওজন স্বাভাবিক থাকলে সেটা বজায় রাখা।
o
চিনি
মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে।
o
শর্করা
বহুল খাবারগুলো (চাল, আটা দিয়ে তৈরি খাবার, মিষ্টি ফল ইত্যাদি) হিসাব করে খেতে
হবে।
o
আঁশবহুল
খাবার (শাঁক সবজি, টক ফল ইত্যাদি) বেশি করে খেতে হবে।
o
সম্পৃক্ত
ফ্যাট যেমন ঘি, মাখন, চর্বি, ডালডা, মাংস কম করে খেতে হবে। পরিবর্তে অসম্পপ্রিক্ত
ফ্যাট যেমন উদ্ভিদ তেল, অর্থাৎ সয়াবিন তেল, সরিষার তেল এবং সব ধরনের মাছ খাওয়ার
অভ্যাস করতে হবে।
o
নির্দেশিত
খাদ্যতালিকা দেখে শিখে নিতে হবে।
o
সমান
ক্যালরির খাবার রুচি ভেদে পরিবর্তন করে খাওয়া যেতে পারে।
o
নির্দিষ্ট
সময়ে খেতে হবে। কোন বেলার খাবার বাদ দেয়া যাবে না। আজ কম, কাল বেশি এভাবে খাবার
খাওয়া যাবে না
o
অসুস্থ
হলে বিশেষ খাদ্যতালিকা মেনে খাবার গ্রহন করতে হবে।
ব্যায়ামঃ
ডায়াবেটিক
রোগীদের রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রনের জন্য ব্যায়াম/ শারীরিক পরিশ্রম একান্ত প্রয়োজন।
যারা কম পরিশ্রমের কাজ করেন, যেমনঃ অফিসের কাজ, ঘরের কাজ ইত্যাদি, তাঁদের সপ্তাহিক ভাবে ১৫০ মিনিট দ্রুত গতির হাটা
অনুশীলন করতে হবে।
নিয়মঃ প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪০ মিনিট হাটা, হাটার শুরুতে ধীর গতিতে
হাটা শুরু করে ১০ মিনিট ব্যবধানে ধীরে ধীরে গতি বৃদ্ধি করতে হবে। উদ্দেশ থাকবে নাড়ীর
গতি যেন দিগুণ বৃদ্ধি পায়। হাটার শেষে আবার হটাৎ করে থেমে না গিয়ে ধীরে ধীরে গতি
থামিয়ে অনুশীলন শেষ করতে হবে। যাঁদের হৃদরোগ আছে তাঁদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন
করতে হবে। টানা দুই দিন হাটা বাদ দেয়া যাবে না।
ডায়াবেটিসের
ঔষধঃ
খাদ্যাভ্যাস,
ব্যায়াম এবং শৃঙ্খলার পাশাপাশি রোগীদেরকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের জন্য ওষুধ গ্রহনের
প্রয়োজনীয়তা প্রায়শই দেখা দেয়। এই ক্ষেত্রে ডায়াবেটিক রোগীর চিকিৎসায় অভিজ্ঞ এমন
চিকিৎসক একজন রোগীকে উপযুক্ত সহায়তা প্রদান করতে পারেন।
একই সাথে রোগীর
নিজের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের ইচ্ছা এবং প্রচেষ্টা ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য
অপরিহার্য।